সাংবাদিকের নাম প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৬:৪০ পিএম
করোনা পরবর্তী সময়ে জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপন করা হবে আজ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষা খাতসহ বেশ কিছু খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাজেট তৈরি করা হয়েছে বাজেট।
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে হাহাকারের মধ্যেই এবার দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট আসছে। ফলে থাকছে নানা চ্যালেঞ্জ। আসন্ন অর্থবছরে সরকারের বিশাল অঙ্কের এ বাজেটে মানুষের প্রত্যাশা হচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম যেন থাকে নাগালের মধ্যে।
এবারের বাজেটে মোটা দাগে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা, বাজেট ঘাটতি কমানো, নতুন দারিদ্র্য ঠেকানো। এর মধ্যে বর্তমান মূল্যস্ফীতিকে অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের পরামর্শ, সাধারণ মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয় পর্যায়ে রাখা কিংবা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের মূলনীতি হিসেবে দেখা উচিত। নতুন অর্থবছরের বাজেটে সামনের দিনগুলোর জন্য যে বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, এর আভাস দিয়েছেন খোদ অর্থমন্ত্রীও।
একাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে গত রোববার (৫ জুন)। আজ বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেল ৩টায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের চতুর্থ এ বাজেটের সম্ভাব্য আকার ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে প্রাধিকার পাবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামের এবারের বাজেটটি প্রস্তুত হয়েছে সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে।
বাজেট প্রস্তাব পেশের আগে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদের বিশেষ সভায় খসড়া বাজেট প্রস্তাবটি অনুমোদিত হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সরকারের এবারের মেয়াদে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ শেষ বাজেট। কারণ আগামী বছরের জুনে যে বাজেট পেশ হবে, সেটি হবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের। ২০২৩ সালের ১ জুলাই শুরু হওয়া এ অর্থবছর শেষ হবে ২০২৪ সালের ৩০ জুন। এর কমপক্ষে ৬ মাস আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দেশে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই বিবেচনায় বর্তমান সরকার এবারই পুরো বাজেট বাস্তবায়নের সুযোগ পাচ্ছে। ফলে সরকার এবারের বাজেটে ব্যাপক কর্মসৃজনের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চাচ্ছে। এজন্য নতুন জিডিপির ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সরকারি বিনিয়োগ ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বাজেট মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। এ হিসাবে নতুন অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকার কম-বেশি। যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার দেশের অভ্যন্তর থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা এবং বিদেশ থেকে ঋণ নেবে ১ লাখ ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। অভ্যন্তরের উৎস হিসেবে ব্যাংক ঋণ নেওয়া হবে ৯৩ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। বাকিটা আসবে সঞ্চয়পত্র থেকে। এবারের বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। সেই সঙ্গে নতুন করে আরও ১১ লাখ মানুষকে সামাজিক সুরক্ষায় আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে সরকার।
সূত্র মতে, করোনার কারণে গত দুই অর্থবছর দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণও এবার বাড়াতে হচ্ছে। ভর্তুকির এ অর্থ জোগাতে এবার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এনবিআর বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ দুই খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে যথাক্রমে ১৬ হাজার কোটি টাকা ও ৪৩ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে নতুন বাজেটে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে যথাক্রমে ১৩ শতাংশ ও ৫ শতাংশ।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল জিডিপির ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে সরকারের জিডিপির অংশ হিসেবে বাজেটের আকার ২ শতাংশ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি থাকবে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা। এ অর্থবছরের জন্য জিডিপির প্রাক্কলন হয়েছে ৪৪ লাখ ১২ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।